রাজনীতি/বিএনপি-গণতন্ত্র মঞ্চ- জুলাইয়ের মাঝামাঝি এক দফা ঘোষণা

Share

সময় ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচনের। বাড়ছে রাজনৈতিক তৎপরতা। বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে অনড়। সামনে একদফার আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে। নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে সামনে আন্দোলন জোরদার করতে কর্মসূচির ছক কষছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। শিগগিরই কর্মসূচির বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। নেতারা বলছেন, এখন আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে আর কর্মসূচি হবে না। একটি কর্মসূচি থেকে আরেকটি কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। এছাড়া পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কর্মসূচি ঠিক হবে। সূত্রের দাবি মধ্য জুলাইয়ে একদফা আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি ও সমমনা দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসতে পারে।
ঘোষণা দেয়ার পর একদফা দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকতে চায় বিরোধী দলগুলো।
আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চকে সঙ্গে নিয়ে আগামী সপ্তাহে একদফা আন্দোলনের সূচনাপত্র ‘যৌথ রূপরেখা’- ঘোষণা করতে চায় বিএনপি। আগামীকাল ৫ই জুলাই এ নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক করার কথা রয়েছে। বৈঠকে যৌথ রূপরেখা ঘোষণার দিনক্ষণ ঠিক করার কথা রয়েছে। সবঠিক থাকলে চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এক দফার আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করবেন নীতি-নির্ধারকরা। যার ভিত্তিতে আগামীর আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন নীতি-নির্ধারকরা।

নেতারা বলছেন, মধ্য জুলাইয়ের আগেই আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। কারণ হিসেবে বলছেন, চলতি মাসেরই কয়েকটি দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসবেন। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন। সরকার ও আন্দোলনে থাকা বিরোধী দলগুলোর মতামত গ্রহণ করবেন। সেই মোতাবেক আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়টি স্পষ্ট হবে। বিদেশিরা আসার আগেই একদফার আন্দোলনের যৌথ রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।

গত ৮ মাসের বেশি সময় ধরে সরকার বিরোধী একদফার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। রাজপথে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সাংগঠনিক সক্ষমতাও যাচাই করছেন নেতারা। এখনো তারুণ্যের সমাবেশের মধ্য দিয়ে মাঠে আছে বিএনপি। দলটির ৩ অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে দেশের বড় ৩টি বিভাগীয় শহর ও জেলায় সমাবেশ করেছে যুবদল, ছাত্রদল, ও স্বেচ্ছাসেবক দল। চলতি মাসেই আরও ৩টি বিভাগীয় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করবে বিএনপি’র ৩ সংগঠন। অন্যদিকে চলমান তারুণ্যের সমাবেশের মধ্যই কৃষক দল, তাঁতীদল, শ্রমিক দল ও মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে ছয় বিভাগে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি জনতার পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। ১৫ই জুলাই থেকে শুরু হবে।

এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারুণ্যের সমাবেশ শেষে ‘সর্বদলীয় ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের’ ব্যানারে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। গণঅনশন, বিক্ষোভ সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধনসহ ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মধ্য দিয়েই ধাপে ধাপে আন্দোলনের চূড়ান্ত আসবে বলে মনে করছেন নেতারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, এক দফার আন্দোলন হবে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য।

এই সময়ে দাবি আদায়ে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামবেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিলেন তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল মানবজমিনকে বলেন, দেশের মানুষের ও বিএনপি’র একটাই চাওয়া। তাহলো শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে আছি। ১০ দফা দাবিতে যুগপৎভাবে আন্দোলন করছি। সেখানে সরকার পতনের এক দফা রয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা আন্দোলনে যাবো। চলতি মাসেই আন্দোলনের যৌথ রূপরেখা ঘোষণা হবে। এর মধ্যদিয়েই এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচি দিবো। দেশের মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। আমাদের চলমান কর্মসূচিতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিচ্ছে। যেকোনো সময় গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের একটাই দাবি-এই সরকারের পতদ্যাগ।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনে একদফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে সমমনা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই একযোগে জুলাই মাসেই এক দফার আন্দোলনে নামবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যৌথ রূপরেখা নিয়ে আমরা ৫ই জুলাই বিএনপি’র সঙ্গে বৈঠক করবো। সেখানে ৩১ দফার ভিত্তিতে যৌথ রূপরেখা ঘোষণার দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। আশা করি আগামী ১০ই জুলাইয়ের আগে এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের যৌথ রূপরেখা ঘোষণা করতে পারবো। এরপর ধারাবাহিকভাবে সবাই সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো। এক মঞ্চ থেকে যৌথ রূপরেখা ঘোষণা হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মান্না বলেন, বিষয়টি আগামীকাল চূড়ান্ত হবে। পৃথক মঞ্চ থেকে ৩১ দফা ঘোষণা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে আমাদের দাবিগুলো মিলেছে। শুধুমাত্র সমাজ সংস্কার বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। আন্দোলনে সফল হবে তাও ঠিক হয়ে যাবে। মোট কথা যেভাবেই হোক বর্তমান সরকারকে সরাতে হবে। দেশে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে।

বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, চলতি মাসেই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন ঘোষণা হবে। আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা হবে। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দিবো। সেখানে সরকার বাধা দিলে আমরা প্রতিহত করবো। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের যা যা করার দরকার, তার সবই করা হবে। সকল প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে একটার পর একটা কর্মসূচি ঘোষণা করবেন শীর্ষ নেতারা। এক দফার আন্দোলন ঘোষণা হওয়ার পর একটা কর্মসূচি আরেকটা কর্মসূচিকে টেনে নিবে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি থামবে না।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপি ১০ দফা দাবি আদায়ে নতুন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এই দাবি আদায়ে বর্তমানে রাজপথে আন্দোলন চলছে। আর এই আন্দোলনকে সামনে আরও বেগবান করতে হবে। এ জন্য আমরা এক দফা আন্দোলনে যাচ্ছি।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, এক দফার আন্দোলন নিয়ে আগামী ৫ই জুলাই বিএনপি’র সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের বৈঠক হবে। আর গণতন্ত্র মঞ্চ এক দফার আন্দোলন করবে। এই আন্দোলন এক মঞ্চ থেকে আমরা যৌথভাবে ঘোষণা করবো। ওই মঞ্চে সমস্ত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা থাকবেন। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম র এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। আর ৫ তারিখের মিটিংয়ে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

উল্লেখ্য যে, গত বছরের ডিসেম্বরে সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন ঘোষণা করে বিএনপি। একই দাবিতে মাঠে নামে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো।

Leave A Reply