আগামী বছরের শেষদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বা ভোটের তফসিল হবে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই সরব হচ্ছে রাজনীতি। বিশেষ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে সোচ্চার বিরোধী দলগুলো। এই দাবিতে আসছে ১০ই ডিসেম্বর থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। এদিন ঢাকায় আহ্বান করা সমাবেশ থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে। সূচনা হতে পারে অন্যান্য বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের। ওই আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে কাজ করছেন নেতারা। যেসব দাবিতে আন্দোলন হবে তাও প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, মূলত আন্দোলন হবে এক দফার। সরকারের পদত্যাগের দাবির আন্দোলনে আরও কিছু বিষয় এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি থাকবে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে।
নেতারা বলছেন, এবার রাজপথে নামলে পেছনে তাকাবেনা বিএনপি। তাই যুগপৎ আন্দোলনের দিনক্ষণ এখনি জানাতে চাইছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা। বিভাগীয় সমাবেশ শেষে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে। গত এক মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৬টি বড় ধরনের সমাবেশ করেছে বিএনপি। এরপরেই ১০টি বিভাগীয় সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। যা গত ১২ই অক্টোবর চট্টগ্রামের গণসমাবেশের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে। আগামী দুইমাস ব্যাপী চলবে বিভাগীয় এ সমাবেশ। ১০ই ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে ইতিমধ্যে ঘোষিত কর্মসূচি। সমাবেশ থেকেই যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে এমনটাই বলছেন নেতারা।
তাই ঢাকার মহাসমাবেশ ঘিরে চলছে নানা আলোচনা। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সরকার পতন আন্দোলন সফল করতে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই গণসমাবেশের মতো বড় কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তারা। এর ফলে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন বেশ উজ্জীবিত। জোরালো হচ্ছে-আন্দোলন, সভা-সমাবেশ। ঢাকার মহাসমাবেশে দেশের সকল বিভাগীয়, জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাদের অংশ নিতে নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। ইতিমধ্যে লিফলেট ও পোস্টার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে পাঠিয়েছে বিএনপি। এই মুহূর্তে বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে দলটি ব্যস্ত সময় পার করলেও, ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে কাজ করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের সমাবেশে প্রত্যাশিত উপস্থিতির চেয়ে কয়েকগুন বেশি মানুষ সমাবেশস্থলে এসেছেন। সরকার দলীয় লোকজন বাধা দিলেও বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম হয়েছে। ১৫ই অক্টোবর ময়মনসিংহে গণপরিবহন বন্ধ ও নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। এতেও সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সূত্র জানায়, ১০টি বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করে দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও একটি বার্তা দিতে চায় বিএনপি। জনগণ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করাই বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মূল লক্ষ্য।
ইতিমধ্যে বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১০টি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী/এমপি, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলা নেতাদের নিয়ে ওই বৈঠক হয়। গণসমাবেশে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিতে লন্ডন থেকে অনলাইনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্দেশনাও দিয়েছেন। ডিসেম্বরের সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, রাজনৈতিক কারণে বন্দি নেতাদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, তত্ত্বাবধায়ক অথবা অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জোরালো হবে। ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে বেশকিছু পরিকল্পনাও নিচ্ছে বিএনপি। সমাবেশে সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাধা আসবে এমনটা ধরে নিয়েই পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। বিভাগীয় সমাবেশে মানুষ যেমন বাধা ডিঙিয়ে আসছেন ঢাকার সমাবেশেও তাই হবে বলে আশা বিএনপি নেতাদের। তারা মনে করছেন সরকার বাধা দিয়ে মানুষকে আটকে রাখতে পারবে না।
ওই সমাবেশ ঘিরে আগে থেকে পরিবহন বন্ধ করা হতে পারে। অনুমতি দেয়া না দেয়া নিয়ে জটিলতা হতে পারে। সরকারি দল সমাবেশ ডেকে সমস্যা তৈরির চেষ্টা করতে পারে। সম্ভাব্য এসব বিষয় মাথায় রেখেই বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের করণীয় ঠিক করবেন বলে নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এবার সরকারের পুরনো কোনো কৌশলই আর কাজে আসবে না। নতুন কোনো কৌশল নিলে এর ফাঁদে বিএনপি নেতাকর্মীরা পা দেবে না। সারা দেশে লোডশেডিংসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ও দলীয় কর্মসূচি পালনকালে বিএনপির ৫ নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গত জুলাই থেকে শুরু হয় বিএনপির আন্দোলন, সভা সমাবেশ। গতমাসে বিএনপির চলমান আন্দোলন আরও গতি পায়। ঢাকার ১৬টি সমাবেশের ১৩টিই মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরের পল্লবীর ও হাজারীবাগে বিএনপির সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বাধা দিলে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে ‘একদলীয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান’ শিরোনামে লিফলেট ও পোস্টারে পুলিশের গুলিতে নিহত নুরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন প্রধান, শহিদুল ইসলাম শাওন ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে নিহত আব্দুল আলমের ছবিও রাখা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, ১০ই ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম হবে। সরকারের কোনো বাধা-বিপত্তিই জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না। যেমনটি ১২ই অক্টোবর চট্টগ্রামে হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েও গণসমাবেশ ঠেকানো যায়নি। ১০ই ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি আসতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান দাবিগুলো নিয়েই ১০ই ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। তবে মহাসমাবেশ নিয়ে কোনো বাধা-বিপত্তি আসলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।