১৯৮৮ সালে গঠিত দলটি ২০১০ সালে ছয় শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদে গিয়েছিল৷ এরপর ২০১৪ সালে ১৩ শতাংশ ও ২০১৮-র নির্বাচনে১৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ এবার এখন পর্যন্ত ২০.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা৷
এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৩০.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষে আছে ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটস৷ বাম, মধ্য ও সবুজ দলের সঙ্গে মিলে তারা মধ্য-বাম জোটে আছে৷
আর সুইডেন ডেমোক্রেটস আছে ডানপন্থি ব্লকে৷ তাদের সঙ্গে মডারেট, ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেট ও লিবারেলরা আছে৷
এই দুই জোটের মধ্যে কারা সরকার গঠন করবে তা বুধবারের মধ্যে জানা যাবে৷
তবে এরইমধ্যে অভিবাসনবিরোধী দলের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় দল হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে৷
চরম ডানপন্থি, ফ্যাসিস্ট ও শ্বেতাঙ্গ ক্ষমতার সমর্থকদের এক করে ১৯৮৮ সালে সুইডেন ডেমোক্রেটস দলের যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় ঐ দলে নব্য নাৎসি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরাও ছিলেন বলেন জানান সুইডেনের গথেনবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইওহান মার্টিনসন৷ অ়বশ্য ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি গিয়ে দলটি প্রকাশ্যে নাৎসিবাদের সমালোচনা করে৷ তারও পরে দলটি বর্ণবাদ নিষিদ্ধ করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলে জানান অধ্যাপক মার্টিনসন৷
২০০৫ সালে ২৬ বছর বয়সে দলের প্রধান হয়ে জিমি আকেসন সুইডেন ডেমোক্রেটস দলের চরম ডানপন্থি ভাবমূর্তি মুছে ফেলার চেষ্টা করেন৷ তিনি দলকে পপুলিস্ট রাজনীতির দিকে নিয়ে যান৷ ২০০৮ সালে বিশ্ব আর্থিক মন্দার সময় সুইডেন ডেমোক্রেটস নিজেদের এলিট বিরোধী ও ‘সাধারণ মানুষের’ পক্ষ নেয়া দল হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করেছিল বলে জানান ড্যানিয়েল লি৷ তিনি সুইডেন ডেমোক্রেটস দলের উত্থান নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন৷
এছাড়া ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকট সুইডেন ডেমোক্রেটস দলের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক মার্টিনসন৷
২০১৬ সালে আশ্রয় আবেদন করে সুইডেনে বাস করছেন তুরস্কের একটি সংবাদপত্রের সাবেক সম্পাদক বুলেন্ট কেনেস৷ তিনি সুইডেন ডেমোক্রেটস নিয়ে লেখালেখি করেন৷ কেনেস বলেন শরণার্থী সংকটের সময় বিশেষ করে অল্পশিক্ষিত সুইডিশরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে হুমকি অনুভব করতেন৷ তারা মনে করতেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা অল্প মজুরিতে কাজ করে তাদের কাজ নিয়ে নিতে পারে৷ অল্পশিক্ষিত সুইডিশরা মনে করতেন শাসক দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটসরা আর তাদের দিকে পর্যাপ্ত নজর দিচ্ছে না৷
ডয়চে ভেলেকে কেনেস বলেন, সুইডেন ডেমোক্রেটসরা দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হওয়ায় তিনি অবাক হয়েছেন৷ তবে এর কারণও খুঁজে পেয়েছেন তিনি৷ কেনেস জানান, ২০১৯ সালে মডারেটরা (যারা এবার ১৯.১ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছে) সুইডেন ডেমোক্রেটসদের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়৷ এছাড়া করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব ও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাও সুইডেন ডেমোক্রেটসের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইওহান মার্টিনসন সুইডেন ডেমোক্রেটসকে মূলত ‘অভিবাসনবিরোধী’ দল মনে করেন৷ তাদেরকে চরম ডানপন্থি মনে করেন না তিনি৷
সাংবাদিক কেনেস মনে করেন, সুইডেন ডেমোক্রেটস গণতন্ত্রের জন্য হুমকি৷
সুইডেন ডেমোক্রেটসরা আশ্রয়প্রার্থী চায় না, অপরাধীদের আরও দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড চায় এবং আরও বেশি করে আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায়৷
নির্বাচনি প্রচারণার সময় সুইডেন ডেমোক্রেটস দলের নেতা আকেসন বলেন, ‘‘সুইডেন একসময় মহান, নিরাপদ ও সফল দেশ ছিল৷ এগুলো আবারও হতে পারে৷ সুইডেনকে আবারও মহান করে তুলতে আমাদেরকে সুযোগ দেয়ার এখনই সময়৷”
সোনিয়া আঙ্গেলিকা ডিন/জেডএইচ