চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে মিয়ানমারের অবস্থা অস্থিতিশীল হওয়ায় দেশটির কোনো নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর উপকন্ঠে লাক্কাতুরা গলফ ক্লাব মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা শ্রমিকদের ভিডিও কনফারেন্সের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ড. মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমারে বিভিন্ন আর্মস গ্রুপ সংঘাতে জড়িয়েছে। সে দেশের নাগরিকরা যখন নির্যাতিত হয়, তখন বাংলাদেশে দিকে চলে আসে এটাই ভয়ের।’
তিনি বলেন, তবে আমরা তথ্য পেয়েছি এবার তারা বাংলাদেশের দিকে আসছে না। কোনো মিয়ানমার নাগরিক যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছি। মিয়ানমারের মর্টার সেল বাংলাদেশের সীমানায় পড়েনি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধ বিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া মর্টার সেল বান্দরবান সীমান্তবর্তী এলাকায় পড়েছে। সেখানে দুটি গোলা অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গত রোববারও আরেকটি মর্টার সেল এসে পড়েছিল বাংলাদেশ সীমান্তে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আজ শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোঁড়া দুটি মর্টার সেল সীমান্ত এলাকায় এসে পড়েছে। তুমব্রু সীমান্তের ৪০/৪১ নম্বর পিলারের কাছে রেজু আমতলী এলাকায় এই দুটি গোলা এসে পড়ে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানা যায়।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচটি ফাইটার জেটকে আকাশে চক্কর দিতে দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টারগুলো বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করে গুলিবর্ষণ করছেও বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তুমব্রু সীমান্তের ৪০/৪১ পিলারের বিপরীতে গাঁ-ঘেষে মায়ানমার সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার থেকে সেখানে গোলাবার্ষণ ছোঁড়া হয়।এতে সীমান্তের এলাকাবাসীদের মাঝে আতঙ্কে বিরাজ করছে।
গত বেশ কিছুদিন থেকে মিয়ানমার সীমান্তের রাখাইন রাজ্যের ‘খা মং সেক’ পাহাড়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সে দেশের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে এই লড়াই শুরু হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জেট ফাইটার ও একাধিক হেলিকপ্টারের তৎপরতা বেড়েছে। হেলিকপ্টার থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে ছোঁড়া হচ্ছে অসংখ্য গুলি ও বোমা। তাতে পাহাড়ের বনাঞ্চলে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে আগুন।
আর এদিকে, সীমান্তে গোলা এসে পড়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। কিন্তু এরপরও সীমান্ত এলাকায় নো ম্যান্স ল্যান্ডে গোলা বর্ষণ বন্ধ করেনি মায়ানমারের সেনাবাহিনী।
এখনো একের পর এক গোলা এসে পড়ায় সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্তে বেশ কয়েকদিন ধরে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা গেলেও সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিজিবি এবং পুলিশ বাহিনী সর্তক অবস্থানে রয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি সংঘটিত ঘটনাটি ঘটছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তাদের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম সীমান্তে গোলাবর্ষণের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনদেরকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এদিকে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি। সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল বাড়িয়েছে বিজিবি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার দিক থেকে ছোঁড়া মর্টারের দুটি গোলা এদেশে এসে পড়ে। যদিও তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এ ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে চলমান স্থলযুদ্ধে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ।