কতো বছর হচ্ছে ডিপ্লোমা কোর্স?

Share

ক’দিন ধরেই আন্দোলন করছেন ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রীর এক ঘোষণার প্রেক্ষিতেই এই আন্দোলন। শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি ডিপ্লোমা কোর্সকে তিন বছরে নামিয়ে আনার কথা বলেন। তিনি বলেন, যে পড়া তিন বছরে পড়ানো সম্ভব তা টেনে চার বছরে নিলে বাবা-মায়ের বাড়তি খরচ হয়। বিশ্বের অনেক জায়গায় যেখানে শিক্ষাব্যবস্থা অনেক উন্নত সেখানে অনার্স কোর্সও আছে তিন বছরের। আমরা মনে করি, ডিপ্লোমা কোর্স তিন বছর হওয়া উচিত। এই বক্তব্যের পরই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে হয় এই আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, চার বছরের কোর্সকে তিন বছর করাটা অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। কেননা, এই স্বল্প সময়ে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ হবে না এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতাও অর্জন হবে না।ফলে চাকরির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা বঞ্চনার শিকার হবেন। ১২ই আগস্ট শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকা, লক্ষ্মীপুর, কুড়িগ্রাম, গাজীপুর সহ অনেক স্থানে এই আন্দোলন হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ এর প্রতিবাদ জানায়। বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতি এক বিবৃতিতে জানায়, সরকার প্রায় একই সময়ে তিন বছরের অনার্স কোর্স চার বছরে বৃদ্ধি করেছে। পাস কোর্সকে দুই বছর থেকে বৃদ্ধি করে তিন বছর করেছে। এসব কোর্সের লাখ লাখ ছাত্রের অভিভাবকদের অর্থ সাশ্রয়ে ওই সব কোর্সের মেয়াদ এক বছর হ্রাস করার কথা কেন বললেন না? অন্যদিকে দেশে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডিগ্রি কৃষি কোর্সকে চার বছর থেকে কমিয়ে কেন তিন বছর করার কথা বললেন না।

শিক্ষামন্ত্রী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে তিন বছরে হ্রাস করার মাধ্যমে দেশের মধ্যম স্তরের প্রকৌশল শিক্ষাকে ধ্বংস করে কার স্বার্থ রক্ষা করতে চাচ্ছেন, তা জাতি জানতে চায়। নাকি দেশের পাঁচ লক্ষাধিক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও সাড়ে চার লক্ষাধিক পলিটেকনিক ছাত্রছাত্রীর রাজপথে নামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিব্রত করতে চান? বিগত ১০ বছর ধরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে চরম শিক্ষক স্বল্পতা, ল্যাব-ওয়ার্কশপ সমস্যা, শিক্ষক-কর্মচারীদের সমস্যা সমাধানে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানায় সংগঠনটি। বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ জানায়, দেশের উন্নয়নে ৪০ শতাংশ ভূমিকা রাখা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার নানা পরিবর্তন এনে এ শিক্ষার গুরুত্ব কমিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে। কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত আমলাদের কেউ কেউ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত করছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দিলেও আমলারা তা এখনো বাস্তবায়ন করেননি। অন্যান্য কারিগরি পেশাজীবীদের ন্যায় চাকরির প্রাথমিক নিযুক্তিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে উন্নয়ন উৎপাদন ঘনিষ্ঠ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের আর কতো বছর অপেক্ষা করতে হবে? এসময় তারা কয়েকটি দাবিও জানান।

এগুলো হলো- চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে তিন বছরে রূপান্তরের উদ্যোগ বাতিলকরণ, বিএনবিসি ২০২০ ও ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ এর জনস্বার্থবিরোধী সংজ্ঞা ও ধারা-উপধারা সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়মিত সুবিধা প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, ওয়ার্কসপ সংকটের সমাধানসহ শিক্ষকদের দ্বিতীয় শিফটের সম্মানী ভাতা প্রদান, স্টেপ প্রকল্পের শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ। বর্তমানে ডিপ্লোমা কোর্সের মেয়াদ চার বছর। ২০০০ সালে এটি চার বছর করা হয়। এর আগে এটি তিন বছর ছিল। তখন শিক্ষার্থীরা এই কোর্সকে ডিগ্রির সমমান করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। যে আন্দোলন পলিটেকনিক কলেজগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় ডিগ্রির সমমান করার লক্ষ্যেই চার বছর করা হয়েছিল ডিগ্রি কোর্স। এই কোর্স এক বছর কমিয়ে আনার বক্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলন হয়েছে বৃহস্পতিবারও। ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউশনে এই আন্দোলনে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ৩০ তারিখের মধ্যে প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। বক্তব্য প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা।

আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এখন ১০তম গ্রেডে আবেদন করতে পারছি। কিন্তু তিন বছরে নামিয়ে আনা হলে তা পারব না। যা হবে আমাদের জন্য হানিকর। তিনি বলেন, আমাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেদিকে নজর না দিয়ে শিক্ষাবর্ষ কমানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে আমাদের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের কোর্স না কমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বৃদ্ধির চিন্তা করা উচিত। আমাদের শিক্ষার মান উন্নয়নের চিন্তা করা উচিত। বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মির্জা এটিএম গোলাম মোস্তফা বলেন, এটি বাস্তবায়ন হলে স্কুলিং সময় ১৪ বছরের জায়গায় ১৩ বছর হয়ে যাবে। এ ছাড়াও চাকরির মর্যাদা কমে যাবে। এ ছাড়া ডিপ্লোমা চার বছরের স্তরে তিন বছর করার পেছনে ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে তিন বছর করার বিষয়ে মত দিয়েছেন বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোক্তাদের সংগঠন টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)। সংগঠনটির সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল আজিজ বলেন, পৃথিবীর কোথাও বর্তমানে চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স নেই। বর্তমানে চার বছরের ডিপ্লোমা লেখাপড়া করে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকের সমান মর্যাদা পাচ্ছে।

আবার কেউ যদি স্নাতক হতে চায় তাহলে তাকে আরও চার বছর পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকৌশল শিক্ষায় আগ্রহীরা দেখছে যে, এর পরিবর্তে সাধারণ শিক্ষায় গেলে উচ্চ মাধ্যমিকসহ ছয় বছরে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়। পাশাপাশি আরেকবছর ব্যয় করলে মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জন করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় সাত বছর যাওয়ার পরও একটি বছর বেঁচে যায়। পাশাপাশি অর্থের সাশ্রয়ও হচ্ছে। সবমিলিয়ে উল্লিখিত প্রতিবন্ধকতার কারণে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। এদিকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) প্রকৌশলী মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, চার বছর থেকে তিন বছর করার জন্য অনেক ধরনের পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ থাকতে হয়। সেইসঙ্গে একটা প্রস্তুতিও নিতে হয়। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্দেশনা পাইনি।

Leave A Reply