রবিবার (১৯ জুন) রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে সোমবার (২০ জুন) সকাল থেকে পথচারী, অফিসগামী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বৃষ্টির পানি জমে, হাঁটু পানিতে ডুবে আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের বাসভবন।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে ২৪১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে নগরীর বিভিন্ন দোকানপাট ও বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি উঠছে। আবহাওয়া অফিসের মতে এমন বৃষ্টি থাকবে আরও দুইদিন।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, “এই বৃষ্টি থেমে থেমে আরও দুইদিন থাকতে পারে। সকাল থেকে বৃষ্টি থেমে গেলেও, বিকালে আবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।”
রাতভর ভারি বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভোর সাড়ে ৬টার পর বৃষ্টি থেমে গেলেও, নামেনি বৃষ্টির পানি। হাঁটু পানি জমেছে চান্দগাঁও থানায়।
মেয়র রেজাউল করিমের বহদ্দারহাটস্থ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়রের দুই তলার বাড়িটির উঠানে হাঁটুপানি। এ বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনের চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যে কাজ চলছে তা পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।”
মেয়র বলেন, “জলাবদ্ধতা থেকে নগরীকে মুক্ত রাখার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে যেসব খাল-নালা আছে, তা নিয়মিত পরিষ্কার করছি। আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী
নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায়, বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সোমবার (২০ জুন) সকালে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে, জেলার ৪৯টি ইউনিয়নের, দুই শতাধিক চরে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রৌমারী উপজেলা। সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েকটি পাকা সড়ক। প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, “বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে ও প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত কর্মকতা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে, নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়ারহাট এলাকায় দুধকুমার নদের একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে, ৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে এই বাঁধে ভাঙন শুরু হয়ং। এছাড়া, ঝুঁকিতে রয়েছে, সারডোব, বাংটুরঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন ক্রস বাঁধটি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, “ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় আরও পানি বাড়বে। পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতের কাজ চলছে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, “রবিবার পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে, ৬ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমিতে পাট ক্ষেত রয়েছে।”
এদিকে, বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও জ্বালানির সংকট। কাজ বন্ধ হওয়ায়, দিনমজুর পরিবারগুলোর ঘরে খাদ্য সংকট প্রকট হয়েছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায়, গবাদি পশুর খাদ্য মিলছে না। চরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হাট বাজারে যাতায়াতসহ যোগাযোগ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভোগাস্তিতে পড়েছে বানভাসি মানুষ।
উলিপুর উপজেলার মশালের চরের বাসিন্দা মুসা মিয়া জানান, “এই চরের ২০০টি পরিবারের সবার বাড়িতেই পানি উঠেছে। সবগুলো সড়ক ও ফসলের ক্ষেত এখন পানির নিচে।”
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম রাসেল বলেছেন, “এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের সবকটিই এখন বন্যাকবলিত। পানিবন্দী হয়ে আছে লক্ষাধিক মানুষ। সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রৌমারী-ইজলামারী সড়ক নিমজ্জিত হয়ে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে রৌমারী শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি।”
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, “জেলার ৪৯টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত ৩১৩ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৪ লাখ টাকা, পশু খাদ্য বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, শিশু খাদ্য বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।”