বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা :সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড

Share

জাতীয় সংসদের বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দুর্ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। পয়েন্ট অব অর্ডারে এ দাবি জানানো হয়।

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দুর্ঘটনা নয়, একটি হত্যাকান্ড। এতোগুলো জীবনগুলো ঝরে গেছে, কন্টেইনার ডিপোর মালিকের চরম উদাসিনতায়।

এছাড়া তদন্তের মাধ্যমে সরকার ওই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে মর্মান্তিক ওই ঘটনা নিয়ে কথা বলেন তারা।

এ সময় রুমিন ফারহানা বলেন, সীতাকুণ্ডের ঘটনা কোন দুর্ঘটনা নয়, এটি হত্যাকান্ড। চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলেছে ওই ডিপোতে দাহ্য পদার্থ রাখার বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি। এই ধরনের পণ্য সংরক্ষণে বিশেষ ধরনের অবকাঠামো দরকার কিন্তু ওই ডিপোতে সেই ধরনের কোন ব্যবস্থা ছিলো না। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসও বলেছেন ডিপোর মালিকপক্ষের কেউ সেখানে কেমিক্যাল রাখার বিষয়টি জানায়নি। সেটা তাদের জানা থাকলে অগ্নিনির্বাপনের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা হতো। তাতে বিষ্ফোরণ হওয়ার আশংকা কমে যেত। ফায়ার কর্মীদের মুত্যুর ঘটনা হয়তো এতে হতো না। এই জীবনগুলো ঝরে গেছে কন্টিইনার ডিপোর মালিকের চরম উদাসিনতায়।

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান দলের এমন একটি পদে থেকে কোনো নিয়ম-কানুন মানার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন নাই। তিনি (মালিক) অনুমোদন ছাড়া ডিপো তৈরী করেছেন। সেই ডিপোতে অনুমোদন না নিয়ে ক্যামিকেল রেখেছেন। এমন কী যখন সেখানে আগুন লেগেছে তখন অগ্নিনির্বাপনের জন্য যারা গেছেন তাদেরকে ক্যামিকেলের বিষয়ে কোনো রকম অবহিত তিনি করেননি। এই খুঁটির জোর তিনি কোথা থেকে পেলেন? এই খুঁটির জোর তিনি পেলেন এই কারণেই যে এই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ।

ওই ঘটনায় ডিপো মালিকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ব্যারিষ্টার রুমিন বলেন, আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১২ সালে মারা যায় ১১১ জন পোষাক কর্মী। সেই ঘটনার মূল আসামী তাজরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন। এই মামলার ১০ বছর হয়ে গেল এখনো পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। বরং এই দেলোয়ার হোসেনকে সম্প্রতি ঢাকা মহানর উত্তর আওয়ামী মৎসজীবী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। দুই দিন পার হয়ে গেলেও বিএম কন্টেইনার ডিপোর মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ আইন ভঙ্গ করে তিনি ডিপোতে হাইডোজেনপারঅক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থ বিশেষ কোনো অবকাঠামো ছাড়াই স্টোর করেছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের কাউকে জানানো হয়নি এখানে দার্জ্য পদার্থ আছে। তাহলে অগ্নিনির্বাপনের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এতগুলো প্রাণ আমাদেরকে হারাতে হতো না। আমি আপনার মাধ্যমে অনুরোধ জানাবো যাতে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রাজধানীর নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে

তিনি বলেন, ২০১০ সালে এই দিনে ঘটা অগ্নিকাণ্ডে মারে যায় ১২৪ জন। শুনতে খুব অবাক লাগলেও সত্য যে এই বিভৎসতম দুর্ঘটনায় যেখানে ১২৪ জন মারা গেছে সে ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। একটি জিডি হয়েছিল যার তদন্ত এখনো চলমান। এরপর চুরিহাট্টায় ঘটে একই ঘটনা। এ দু’টি ঘটনার কারণ একটাই কেমিক্যাল গুদাম। ওই ঘটনার সরকার বলেছিল কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো পুরনো ঢাকা থেকে সেই গুদাম সরানো হয়নি। সেখানে ১৫ হাজার কেমিক্যাল গুদাম ও দোকানের নামে বারুদ রয়েছে। এর মধ্যেই মানুষ বসবাস করছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বলেন, সীতাকুন্ডের নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ ঘটনাটিকে কী আমরা দুর্ঘটনা হিসেবে সান্তনা নেবো? নাকি এর পেছনে কোন নাশকতা রয়েছে। নিশ্চয়ই সরকার তদন্ত করে তা বের করবে বলে আশা রাখি। যদিও এসব ঘটনার তদন্তের আলোর মুখ আমরা দেখি না। তিনি আরো বলেন, সরকারকে বলতে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প করছেন ভালো, কিন্তু দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমরা যোজন যোজন দূরে আছি, সীতাকুন্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য বলেন, এই দুর্ঘটনার পর অনেক প্রশ্ন সামনে আসছে। টেলিভিশন টক শোতে সরকার পক্ষের সব বক্তব্য দেখি পজিটিভ ও বিরোধী পক্ষের বক্তব্য নেগেটিভ। আমরা ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট দেই, কিন্তু কেন ফায়ার সার্ভিসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আনতে পারি না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প সম্পন্ন করি তখন বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। বিশ্বগণমাধ্যম প্রশংসা করে খবর হয়। কিন্তু বিপরীতে আগুনে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়, সেই লজ্জা রাখি কোথায়? ফায়ার কর্মীদের হাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিতে পারলে সীতাকুন্ডের ট্রাজেডির গল্পটা পজিটিভভাবে বিশ্বের কাছে আসতো বলে উল্লেখ করেন তিনি। এখন এ নিয়ে আমরা কি জবাব দিবো।

Leave A Reply