ছয় মাস ধরে কারাগারে বন্দি স্বজন। জামিন পাচ্ছেন না। শুনানির সময় আদালতে তাঁকে একনজর দেখার জন্য রওনা হয়েছিল মা, স্ত্রী ও বোনরা। কিন্তু পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তাদের পাঁচজন।
পরে আসামি সেই স্বজন জামিন পেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে দেখার জন্য যারা গিয়েছিল, তাদের সঙ্গে দেখা হলো মৃত্যুর পরে। গতকাল বুধবার রাজবাড়ীতে ঘটে এই দুর্ঘটনা।
পুলিশ ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা জানায়, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পুইজোর গ্রামের মোতালেব মণ্ডলের ছেলে ইসলাম মণ্ডল একটি অস্ত্র আইনের মামলায় কারাগারে। ওই মামলায় রাজবাড়ীর আদালতে গতকাল হাজিরা ছিল। তাঁকে একনজর দেখার জন্য সকাল ৯টার দিকে পরিবারের সদস্যরা বসির মিয়ার ছেলে নাছির উদ্দিনের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় রওনা হয়। রিকশাটি কালুখালী উপজেলার চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন লেভেলক্রসিংয়ে পৌঁছলে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা রাজবাড়ীগামী একটি ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। সে সময় বিপরীত দিক থেকে ছেড়ে আসা একটি প্রাইভেট কার পুনরায় অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে চালক নাছির উদ্দিন, ইসলামের মা মশিরন বেগম, স্ত্রী রাবেয়া বেগম, বড় বোন মরিয়ম বেগম, মরিয়মের মেয়ে শিলা এবং শিলার শিশুসন্তান নয়ন নিহত হয়। আহত হয় ইমলামের আরেক বোন মর্জিনা ও ভাই আহম্মদ মণ্ডল। তবে মর্জিনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রতিবেশী নুরুজ্জামান শীতল জানান, প্রায় সাত মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে এলেও ইসলাম মণ্ডল তাঁর মা, স্ত্রী, বোন ও ভাগনিকে জীবিত দেখতে পেলেন না। ইসলাম বাড়ি ফিরে আসার পর নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আকমল মণ্ডল বলেন, সড়কের চেয়ে লেভেলক্রসিং নিচু। ফলে এখানে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। এর জন্য রেলওয়ে ও সড়ক বিভাগ যৌথভাবে দায়ী।
ইসলামের বাবা মোতালেব মণ্ডল জানান, ইসলাম ছয় মাস ধরে কারাগারে বন্দি। বুধবার তাঁর মামলার তারিখ ছিল। আইনজীবী জানিয়েছিলেন, জামিনের আবেদন করবেন। আদালত মঞ্জুর করতে পারেন, না-ও পারেন; যে কারণে তাঁর মা, স্ত্রী ও বোন-ভাগনিরা ইসলামকে একনজর দেখার জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় রওনা হয়। তাদের সঙ্গে আর ইসলামের দেখা হলো না।
রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা সনাজ মিয়া জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে কালুখালী থানা ও পাংশা হাইওয়ে থানা পুলিশের সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন।
পাংশা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক জুয়েল রানা জানান, তাঁরা ঘাতক ট্রাকটি আটক করলেও চালক ও সহকারীকে ধরতে পারেননি।
কালুখালী থানার ওসি নাজমুল হাসান জানান, বিকেলে নিহত ছয়জনের মরদেহ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পাংশা থানার ওসি মাসুদুর রহমান জানান, অস্ত্র আইনের মামলায় ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন ইসলাম। ওই দিন রাত আড়াইটার দিকে ইসলাম ও মো. হামিদুর মিয়া পুলিশকে সংবাদ দেন, পুইজোর গ্রামের শাহাদাত মণ্ডলের ছেলে বাবু মণ্ডলের রান্নাঘরের খড়ির চালার মধ্যে অস্ত্র ও রামদা রয়েছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে এবং তাঁদের উপস্থিতিতে রান্নাঘর থেকে একটি ওয়ান শ্যুটার গান ও একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। সংবাদদাতাদের এরূপ তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের সন্দেহ হয়। তাঁরা সংবাদদাতাদের পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এক পর্যায়ে ইসলাম জানান, চাচাতো চাচা বাবু মণ্ডলের সঙ্গে জমি নিয়ে তাঁদের বিরোধ ও মামলা চলমান। এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অস্ত্র রেখে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন।
রাজবাড়ী কারাগারের জেলার হুমায়ন কবির খান জানান, জামিন আবেদন আদালত মঞ্জুর করায় ইসলামকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।