প্রতিবেদন:
এইটাও কি বিশ্বাস করতে হবে যে ভিয়েতনামের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন ওয়ার্ল্ড টপ ৫০০-র মধ্যে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টপ ১০০০ এর মধ্যে! হে ধরণী দ্বিধা হও, আমি তন্মধ্যে প্রবেশ করি। কয়েক বছর আগেও আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে ছিল। ভিয়েতনামের যে সত্যিকারের উন্নয়ন ঘটছে তার প্রমাণ হলো তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে হাত ধরাধরি করে শিক্ষায় উন্নত হচ্ছে। ইনফ্যাক্ট, উল্টো আগে শিক্ষায় উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে বলে উন্নত মানের শিক্ষিতরা এদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। হো চি মিনের নেতৃত্বে ১৯৪৫ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীন হলেও সত্যিকারের স্বাধীন হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫ এই পুরো সময় জুড়ে কোল্ড-ওয়ারে জর্জরিত হয়েছে ভিয়েতনাম। ১৯৯২ সাল থেকে উদার অর্থনীতি চালু হওয়ার পর থেকে ভিয়েতনামকে আসর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৪ সালে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি Duy Tan University হয় এবং আজকে এটি ভিয়েতনামের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং টাইমস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি। শুধু তাই না ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত Ton Duc Thang Universityপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও টাইমস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে বিশ্ব সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি এবং এটি ভিয়েতনামের দ্বিতীয় সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। কয়েক বছর আগেও এইগুলো র্যাংকিংয়ে অনেক পেছনে ছিল অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও পেছনে ছিল। এইভাবে অন্যরা আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে আর আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বলে এইসব র্যাংকিংককে আমরা পুছি না। আজ যদি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করতো তাহলে দেখতেন র্যাংকিং নিয়ে bragging কাকে বলে।
এইভাবে ভিয়েতনাম যদি শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে যায় আমি ধারণা করছি আর কয়েক বছরের মধ্যেই অর্থনীতিতে ভিয়েতনাম দক্ষিণ কোরিয়া মালয়েশিয়ার মতো হয়ে যাবে। এই জন্যই আমি relentlessly বলে যাচ্ছি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিন। শিক্ষা ও গবেষণায় উন্নতি ব্যতীত কেবল টাকা পয়সায় বড়োলোক হলে উন্নত বলে না। আমি এইরকম বহু মানুষ দেখেছি যারা হঠাৎ করে বিপুল টাকাপয়সার মালিক হয়েছে কিন্তু জীবনযাত্রা এবং রুচিজ্ঞান দেখলে বমি আসে। রাষ্ট্র হিসাবে আমাদেরও একই অবস্থা। ভিয়েতনাম শিক্ষায় উন্নত হচ্ছে বলেই সেই দেশে চাকরির বাজারে যোগান দেওয়ার মতো যথেষ্ট শিক্ষিত যোগ্য চাকরি প্রত্যাশী তৈরি করতে পারছে। এজন্যই ভিয়েতনামের বড় বড় চাকরির বাজার বিদেশিদের দখলে না। তাছাড়া তারা যে শিক্ষিত হচ্ছে সেটা তাদের রপ্তানিবাজার ডিভার্সিফাই করা দেখেও বোঝা যায়। তাদের উন্নয়ন সত্যিকারের টেকসই উন্নয়ন। অযথা মেগা প্রজেক্ট নাই। রাস্তাঘাটে স্বয়ংক্রিয় ইলেক্ট্রনিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা আছে। সড়কে অব্যবস্থা নেই বললেই চলে। রাস্তা ব্রিজ নির্মাণের খরচ আমাদের মতো আকাশচুম্বী না আবার স্থায়িত্বের দিক থেকে আমাদের চেয়ে বেটার। এই সবই প্রমাণ করে এরা সততার দিক থেকেও আমাদের চেয়ে ভালো।
আমাদের দুরবস্থা হবে না কেন? এই মুহূর্তে যদি কোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ খালি হয় আমাদের সরকার কেমন ভিসি খুঁজবে? খোঁজার প্রাথমিক শর্ত হলো দলান্ধতায় কতটা অন্ধ। সেখানে শিক্ষকতার মান, গবেষণার মান একটুও বিবেচিত হবে না। ছাত্রাবস্থায় কেউ যদি সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা হয়ে থাকে কিংবা শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে কয়েকবার জয় লাভ করে থাকে এইগুলিই হলো ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। যার ফল আজ আমরা ভোগ করছি। এরাই আবার নিজেদের দেশপ্রেমিক ভাবে। সত্যি সেলুকাস! এমন দেশটি পৃথিবীতে কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি! লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়