সুনামগঞ্জের শাল্লায় হাওরে তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে কৃষকের হাহাকার

Share

এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে যে, হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। কিন্তু কৃষকদের দাবি, ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের কাটা ধান আবার জমিতেই রয়ে গেছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, শাল্লার মাউতির বাঁধ (৮১ নম্বর পিআইসি) ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ শুরু হতে থাকলে কৃষকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কৃষকেরা কাটা ধান, নাকি জমির পাকা ধান, না খড় তুলে আনবেন এই নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার কাটা ধানের স্তুপের পাশে বসে কাঁদতে থাকেন।

ভাঙা বাঁধের পাশে কাটা ধানের স্তুপের কাছে বসে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আভা রানী দাস। স্বামী কানন দাসের মাথায় ধানের বোঝা তুলে দিতে দিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন, “তারা খালি নিজের চিন্তা করে, বাঁধে লাখ লাখ টেকা দুর্নীতি করে। আমি ২৫ কেয়ার (আট একর) ধান করছিলাম। ৫ কেয়ার (আধ একরের কম) কাটছিলাম, অখন নিতাম পাররাম না, নিতে নিতে ইগুন নষ্ট অই যাইব”।

আভা রানীর মতো তলিয়ে যাওয়া ফসলের চিন্তায় হাওরে বসেই কাঁদছেন আফাজ মিয়া, সিরাজ উদ্দিন, মনির মিয়াসহ অনেক কৃষক।

ফসল হারানোর সংশয় নিয়ে তারা বললেন, “এই বাঁধ ভাঙতে পারে না, তদারকি ও অবহেলায় বাঁধটি ভেঙে আমাদের সর্বনাশ হয়েছে”।

কৃষক জামাল মিয়া বলেন, “যারা বাঁধের কাজে গাফিলতি করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক”।

তলিয়ে যাওয়া বাঁধের কাছে দাঁড়ানো আঙ্গাউড়ার হিমেল সরকার নামে স্থানীয় একজন বলেন, “রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বাঁধের নিচে বুরুঙ্গা দিয়ে পানি যাচ্ছে দেখে হাওরে থাকা কয়েকজন কৃষককে জানাই। তারা বাঁশ বস্তা ছাড়াই খড় দিয়ে একঘণ্টা পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বাঁধ ভেঙে যায়। পরে সকাল ৭টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসেন, কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি”।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের শাল্লার সভাপতি তরুন কান্তি দাস বললেন, “হাওরে ৭০ ভাগ ধানকাটা হয়েছে। তবে ২০ ভাগ কাটা ধান খেতেই আছে। ৪৮ ঘণ্টায় পুরো হাওর ডুবে যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) বাঁধের কাজে মনোযোগী ছিল না, তাই আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে”।

একই মন্তব্য করেন শাল্লা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাউতির বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি কৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, “আমি ভালো করে বাঁধের কাজ করেছি। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি শনিবার রাতেও বাঁধের ওখানে ছিলাম”।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব বলেন, “পানির চাপ বেশি থাকায় বাঁধ রক্ষা করা যায়নি”।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, “রবিবার সকালে দায়িত্বশীলদের বাঁধ ঠেকানোর কাজ করতে কোনো বাধা ছিল না। কেন করলেন না তারাই ভালো বলতে পারবেন”।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “হাওরে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধটি মেরামতের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বাঁধ নির্মাণে যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

Leave A Reply