গৃহযুদ্ধ শুরুর পর প্রথম আরব দেশ সফরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ

Share

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের অফিস বলেছে, আসাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে দেখা করেছেন। এতে আরও বলা হয়েছে যে, নেতারা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

এই সফর থেকে স্পষ্ট যে, আরব বিশ্ব এক সময়ে ব্যাপকভাবে নিন্দিত সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আবার সম্পর্ক স্থাপনে ইচ্ছুক। বাশার আল-আসাদের প্রধান মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন হামলার মধ্যেই এই সফরের খবর এল। রাশিয়া প্রায় চার সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। সিরিয়া রাশিয়ার আক্রমণকে সমর্থন করেছে এবং এই যুদ্ধের জন্য পশ্চিমাদের দোষারোপ করেছে।

১১ বছর আগে সিরিয়ায় সংঘাত শুরু হওয়ার পরে দেশটিকে ২২-সদস্যের আরব লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং প্রতিবেশী দেশগুলো দেশটিকে বয়কট করেছিল। সংঘাতে লক্ষাধিক মানুষ নিহত এবং সিরিয়ার জনসংখ্যার অর্ধেক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই যুদ্ধের ফলে সিরিয়ার বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এর পুনর্গঠনে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ হবে।

২০১১ সালের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বাশার আল-আসাদের কঠোর অবস্থানের ফলে গৃহযুদ্ধ বাধে এবং এর জন্যে আরব ও পশ্চিমা দেশগুলো মূলত আসাদকে দায়ী করে। আরব ও পশ্চিমা দেশগুলো সংঘাতের প্রথম দিকে বিরোধীদের সমর্থনও করেছিল।

“উদ্বেগে” ওয়াশিংটন

আসাদের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ওয়াশিংটন “বাশার আল-আসাদকে বৈধতা দেওয়ার এই আপাত প্রচেষ্টায় গভীরভাবে হতাশ ও উদ্বিগ্ন। আসাদ অগণিত সিরিয়ান জনগণের মৃত্যু, দুর্ভোগ, যুদ্ধ-পূর্ব সিরীয় জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বাস্তুচ্যুতি এবং ১ লাখ ৫০ হাজার সিরীয় পুরুষ, নারী এবং শিশুদের নির্বিচারে আটক ও নিখোঁজের জন্য দায়ী এবং দায়বদ্ধ।

যুদ্ধ একটি অচলাবস্থায় পতিত হওয়ায় এবং আসাদ তার দুই মিত্রের কাছ থেকে সামরিক সহায়তার পাওয়ার কারণে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ সংহত করায়, আরব দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ার নেতার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৮ সালের শেষের দিকে আসাদ সরকারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের আরব পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিরিয়ায় তাদের দূতাবাস আবার চালু করে। যদিও দুই দেশের সম্পর্ক শীতল ছিল। গত বছর আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য দামেস্কে এসেছিলেন। এটি ২০১১ সালের পর দেশটির শীর্ষ কূটনীতিকের প্রথম সিরিয়া সফর। আমিরাতের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়ে এই সফরের সমালোচনা করে বলেছিল যে, এটি আসাদ সরকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্বাভাবিককরণকে সমর্থন করবে না।

শাসক কর্তৃক অভ্যর্থনা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএম জানিয়েছে যে, দেশটির প্রকৃত (ডি ফ্যাক্টো) শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আবুধাবিতে তার প্রাসাদে আসাদকে অভ্যর্থনা জানান।

বৈঠকে শেখ মোহাম্মদ আশা প্রকাশ করেন, “এই সফরে সিরিয়া এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতার সূচনা হবে”।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আসাদ আমিরাতের শাসক শেখ মোহাম্মদকে সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং দুই নেতা আরব বিশ্বের পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করেন। শুক্রবার আসাদ আবুধাবি থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

আসাদকে শেখ মোহাম্মদ জোর দিয়ে বলেন যে সিরিয়া “আরব নিরাপত্তার মৌলিক স্তম্ভ” হিসেবে আছে এবং তিনি আশা করেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এর উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নেতারা “সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহারের” গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

একইরকম অস্পষ্ট এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, দুবাইয়ের শেখ মোহাম্মদ সিরিয়ার সঙ্গে “গঠনমূলক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার” করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সদিচ্ছার ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন এবং যুদ্ধের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

Leave A Reply