অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লাউচাপড়া

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে হারিয়ে যেতে কিংবা বুনো পাহাড়, ঘন অরণ্য, পাহাড়ি ঝরনা, যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত মায়াঘেরা অঞ্চলে নিজের একাকিত্বকে বিলীন করতে চাইলে লাউচাপড়া হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। আর যদি সঙ্গে থাকে প্রিয়জন কিংবা পরিবার, সেজন্য লাউচাপড়ায় রয়েছে অবকাশ কেন্দ্র।

ছোট-বড় পাহাড়ের সঙ্গে সবুজ অরণ্যের মোহনীয় রূপ আপনাকে মোহিত করবে। আর আবাহাওয়া ভালো থাকলে চোখ বুলিয়ে নিতে পারবেন সীমান্তের ওপারে।

অবকাশ কেন্দ্রের দেড়শ ফুট উঁচু টিলার উপরে নির্মিত প্রায় ৬০ ফুট উঁচু টাওয়ারে উঠলেই চোখের সামনে চলে আসবে দিগন্ত বিস্তৃত সারি-সারি সবুজ পাহাড়-টিলা। চোখে পড়বে সীমান্তের ওপারের মেঘালয় রাজ্যের সুবিস্তৃত পাহাড় এবং ভারতের তুরা জেলার পাহাড়ি ছোট্ট থানা শহর মহেন্দ্রগঞ্জ।

জামালপুর জেলা সদর থেকে ৩৮ কিলোমিটার উত্তরে বকশীগঞ্জ উপজেলা। বকশীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে পাকা রাস্তায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে প্রায় ১০ হাজার একর জায়গাজুড়ে বিশাল পাহাড়ি অঞ্চল। এলাকাটি বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। পুরো পাহাড় আর বনভূমি লাউচাপড়া আর ডুমুরতলা, এই দুটি মৌজায় বিভক্ত। এই দুটি মৌজায় অবস্থিত গ্রামগুলোর নামও চমৎকার লাউচাপড়া, দিঘলাকোনা, বালুঝুড়ি, সাতানীপাড়া, পলাশতলা, মেঘাদল, শুকনাথপাড়া, গারোপাড়া, বালিজোড়া, সোমনাথপাড়া, বাবলাকোনা ইত্যাদি। বাঙালিদের সাথে এসব গ্রামে বাস করে প্রায় ৭০০ গারো, কোচ, হাজং আদিবাসী পরিবার। দেখে আসতে পারেন তাদের জীবনযাত্রাও।

পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ঝরনা রয়েছে লাউচাপড়াতে। অবকাশ কেন্দ্রে ঢোকার মুখেই রয়েছে স্বচ্ছ লেক। শীতের মৌসুমে পর্যটকের ঢল নামে এই অবকাশ কেন্দ্রে। মুখরিত হয়ে যায় পুরো অঞ্চল। এখানে কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে ধানের মৌসুমে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসে বুনো হাতির দল।

লাউচাপড়া যেভাবে যাবেন

জায়গাটি জামালপুর জেলায় হলেও ঢাকা থেকে শেরপুর হয়ে যাওয়া অনেকটা সহজ। শেরপুর হয়ে গেলে ঢাকা থেকে লাউচাপড়া যেতে বাসই সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। ঢাকা থেকে ডে-নাইট বাসে চলে আসতে পারেন শেরপুর। শেরপুর থেকে বাস, সিএনজি, অটো বা ভ্যানে শ্রীবর্দী কর্ণজোড়া হয়ে যাওয়া যায় লাউচাপড়া। শেরপুর থেকে লাউচাপড়ার দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার।

আর যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে ঢাকা থেকে ট্রেনে জামালপুর জেলা শহরে এসে জামালপুর থেকে বাস, সিএনজি বা অটোয় বকশীগঞ্জ হয়ে লাউচাপড়ায় যাওয়া যায়। লাউচাপড়ায় প্রবেশের সময় আপনার চোখে পড়বে রাস্তার দুপাশে গ্রামীন জনপদ, ফসলের মাঠ।

লাউচাপড়ায় থাকার জায়গা

পর্যটকদের জন্য জামালপুর জেলা পরিষদ গারো পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করেছে পিকনিক স্পট ‘ক্ষণিকা’। এখানে থাকতে গেলে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। যোগাযোগ করতে হবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, ফোন: ০৯৮১-৬২৭১৬, ০৯৮১-৬৩৫১৪, ০৯৮১-৬৩২৪০।

লাউচাপড়া অবকাশ কেন্দ্রের পাশেই ‘বনফুল’ নামে বেসরকারি একটি রিসোর্ট রয়েছে। এটি নানা সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা-

রিভার এন্ড গ্রীন ট্যুরস, এম আর সেন্টার (৭ম তলা), বাড়ি-৪৯, সড়ক ১৭, বনানি বাজার, বনানি, ঢাকা । ফোন: ৮৮২৬৭৫৯, (০৭৮৯) ২২৪৫৯৩।

নিরাপত্তা বাংলাদেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মতোই। লাউচাপড়ার অদূরেই রয়েছে বিজিবি ক্যাম্প। তবে সন্ধ্যার পর বাইরে অবস্থান না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *